সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০২৪

কুমিল্লায় বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের বই খাতা

কুমিল্লায় বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের বই খাতা

কুমিল্লা জেলার ভয়াবহ বন্যায় বসতঘর ও জিনিসপত্র কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারেননি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। শুধু পরনের কাপড় নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে অনেকের। কোনোভাবে জীবন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন। তবে বাড়ি ফিরে দেখেন, নিজের ঘরটি দাঁড়িয়ে থাকলেও ঘরের আসবাবপত্রের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বই-খাতাও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বন্যার পানিতে।
বুড়িচং খাড়াতাইয়া মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসপিয়া আক্তার বলেন, বন্যার পানি ঘরে উঠেছিল। অন্য সবকিছুর সঙ্গে তার ও ছোট বোন ত্যাহিয়ার বইপত্র ভিজে যায়। রোদে শুকানোর চেষ্টা করছে। উপজেলার ভরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমন চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বানের পানি নেমে গেছে বিধ্বস্ত বাড়িতে খুঁজে পাওয়া গেল তার স্কুল ব্যাগ। কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে থেকে বাড়ির অন্যান্য জিনিসের সাথে ডুবে গেছে খাতা কলম ও বই। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে মায়ের সাথে চলে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। ১১ দিন পর বাড়িতে ফিরে বই পেলেও নষ্ট হয়েছে অধিকাংশই।
শুধু সুমনই নয় তার মত অনেক শিক্ষার্থীর বই ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। এখন চরম সংকটে এসব শিক্ষার্থীরা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পড়াশুনা। ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার নাগাইশ গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। যা সহায় সম্বল ছিল, বন্যায় তাও গেছে। অনেকের তো ঘরবাড়িও শেষ। সরকার থেকে সহযোগিতা না পেলে অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বেন বলে জানান তিনি। একই এলাকার সেলিনা বেগম বলেন, মানুষ বাঁচবে না বাচ্চাদের লেখাপড়া করাবে। ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য টাকার দরকার। তিনি বলেন, মানুষজন সাহায্য সহযোগিতা করছে বলে কোনোরকমে খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু পরিবার নিয়ে মাথাগোঁজার আশ্রয় দরকার। এজন্য সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নইলে মানুষ পথে বসবে।  গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে। উপজেলার বিভিন্ন অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে এখনো পানি রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার যেসব স্কুলে পানি ওঠেনি, সেগুলোতেও আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। ফলে চলতি বন্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে।
কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার ভয়াবহতা প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরমধ্যে ১০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ ২০৫টি এবং ১২৩টি মাদ্রাসার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান খুব শিগগরিই চালু করা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীরা যেন স্কুলে কলেজে ফিরতে পারেন সেজন্য সরকারি সর্বোচ্চ সহযোগিতার কথা জানালেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
দুলালপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমীর আলীর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ূয়া মেয়ে আরিশা রোদে বইখাতা শুকাতে দিয়েছে। সে বলে, আবার স্কুলে যাব। তাই বইখাতা লাগবে। ভিজে বইয়ের অনেক পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। খাতাগুলো শুকিয়ে লেখার উপযোগী করার চেষ্টা করছে শিশুটি। আরিশা বাবা আমীর আলী জানান, বন্যায় ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলো মেরামত করতে হবে। ধান-চালও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য তাদের বইখাতাও লাগবে, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়- সেখানে সব হারিয়ে দিশেহারা তারা। জীবনের অর্ধেক সময় পার করলেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি কখনো। তানজিম বলছিল, বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন সময নানা কারণে টানা স্কুল বন্ধ থাকায় এমনিতেই ঠিকমত সিলেবাস শেষ করা যাযনি। বন্যায় বই-খাতা সব নষ্ট হওয়ায় কিছুদিন বাদে তাকে নির্বাচনি পরীক্ষায বসতে হবে প্রস্তুতি ছাড়াই। বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিনুয়ারা আক্তার বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারই বন্যার কারণে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর। শিক্ষার্থী মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে। তাদের আবার স্কুলমুখী করতে হলে শিক্ষকদের পারিবারিক ঘুরে গিয়ে উৎসাহী করতে হবে। সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, নিজের চোখের সামনে বাড়িঘর ভেঙে যেতে দেখে শিশু শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। তাদের সবার সহযোগিতার মাধ্যমে আবার স্কুলে ফেরাতে হবে। কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যাদের বইখাতা ও স্কুল-কলেজের পোশাক হারিয়েছে আমরা তাদের সহযোগিতা করব। অনেক স্কুলকলেজের সংযোগ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক করতে হবে। এছাড়া একতলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হযেছে। সেগুলো ঠিক না করে পাঠদান শুরু করা যাবে না। আমরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছি। সব এলাকা থেকে পানি নেমে গেলে মোট ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা জানা যাবে। বন্যার ক্ষতি এখনও পুরোপুরি নিরূপণ করা যায়নি।