ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নিজের দুইটি পিস্তল নিলামে বিক্রি হয়েছে। দাম উঠেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ইউরো (১৪ লাখ পাউন্ড)। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া বিনিময় মূল্য ১ ইউরো = ১২৭ টাকা ৮৬ পয়সা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় পিস্তল দুইটির দাম আসে প্রায় ২১ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকা।
জানা গেছে, এই দু'টির একটি পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন নেপোলিয়ন।
ফরাসি বন্দুকনির্মাতা লুই-মারিন গসেত এই পিস্তল দুইটি তৈরি করেছিলেন। আশা করা হয়েছিল, ১২ থেকে ১৫ লাখ ইউরোতে বিক্রি হতে পারে এই পিস্তল দুইটি।
রবিবার ওসেনাত নিলামকেন্দ্রে এই পিস্তলগুলো বিক্রি হয়েছে। এই নিলামকেন্দ্রটি ফন্তেনব্ল্যু প্রাসাদের পাশেই অবস্থিত। ১৮১৪ সালে রাজসিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার অল্প সময় পর এই প্রাসাদেই আত্মহত্যার চেষ্টা চালান নেপোলিয়ন।
নিলামের অল্প সময়য় আগে ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই পিস্তলগুলোকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এর রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পিস্তলগুলো নিয়ে কেউ ফ্রান্স থেকে বের হতে পারবেন না। আর হলেও, তা অল্প সময় পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
পরবর্তী ৩০ মাসের মধ্যে ফরাসি সরকারকে নতুন মালিকের কাছ থেকে এই পিস্তল কিনে নিতে হবে। পিস্তলগুলোতে সোনা ও রুপার আস্তরণ রয়েছে। এক পাশে নেপোলিয়নের ছবিও খোদাই করা আছে।
১৮১৪ সালের ১২ এপ্রিল রাতে তিনি এই পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। এর অল্প সময়য় আগে বিদেশি সেনার হাতে পরাজিত হয়ে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
তবে তার সহকারী আরমান্দ দ্য কলেনকোর্ত পিস্তল থেকে বারুদ সরিয়ে রাখেন। এরপর নেপোলিয়ন বিষপান করলেও প্রাণে বেঁচে যান।
পরবর্তীতে তিনি কলেনকোর্তকে পিস্তল দুইটি উপহার দেন। তিনি তার বংশধরদের কাছে এটি দিয়ে যান।
নিলামে পিস্তলের সঙ্গে এর মূল বাক্স ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও বিক্রি হয়েছে, যেমন একটি পাউডার হর্ন ও গানপাউডারের ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত রড।
নিলাম প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাঁ-পিয়েরে ওসেনাত জানান, এই পিস্তল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের সঙ্গে 'নেপোলিয়নের জীবনের সবচেয়ে খারাপ অধ্যায়' জড়িয়ে আছে।
সম্রাট নেপোলিয়নের ব্যবহৃত যেকোনো ব্যক্তিগত উপকরণ নিলামে মহামূল্যবান হিসাবে বিবেচিত। এর আগে গত নভেম্বরে তার ব্যবহার করা একটি তিন কোণা টুপি ১৯ লাখ ইউরোতে বিক্রি হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ এলবায় নির্বাসিত থাকার পর ১৮১৫ সালে এই ঐতিহাসিক নেতা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তবে পরবর্তীতে তিনি ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হন।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপ সেইন্ট হেলেনায় দ্বিতীয় নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৮২১ সালে নেপোলিয়নের জীবনাবসান ঘটে।