মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫

রেল কর্মচারীর যোগসাজশে সিন্ডিকেট, কালোবাজারে টিকিট

রেল কর্মচারীর যোগসাজশে সিন্ডিকেট, কালোবাজারে টিকিট

ট্রেনের টিকিট কাটতে নানা বিধি-নিষেধ, তদারকির পরও থেমে নেই কালোবাজারি। মূলত টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরতরাই জড়িত এই কালোবাজারি সিন্ডিকেটে। এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। আর ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে কালোবাজারিরা ৩-৪ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে।

বাড়তি লাভের ৫০ শতাংশ পায় সরাসরি সিন্ডিকেটে জড়িত সদস্যরা। আর বাকি ৫০ শতাংশ চলে যায় কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইটি বিশেষজ্ঞদের হাতে। যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শুধুমাত্র দুটি সিন্ডিকেটের হাতেই প্রতিদিন চলে যাচ্ছে প্রায় ৫০০ টিকিট।

দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেটের ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২), জোবায়ের (২৫)।

তাদের মধ্যে সেলিম ও উত্তম চন্দ্র দাস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দুই হোতা, যাদের নিজেদের নামে সেলিম সিন্ডিকেট ও উত্তম সিন্ডিকেট পরিচিত।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তমের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।

খন্দকার মঈন বলেন, সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা উপযুক্ত সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে। রেলস্টেশনে এসে টিকেট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে তারা টিকেট বিক্রির জন্য ঘুরাঘুরি করেন এবং অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি করে থাকেন। এছাড়াও ট্রেন ছাড়ার সময় যতো ঘনিয়ে আসতে থাকে তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়।

র‌্যাবের এই কমান্ডার বলেন, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তাররা প্রতিটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে। সাধারণত প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ গ্রেপ্তাররা নিতো এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।

গ্রেপ্তার উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত টিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।