মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য উত্তপ্ত। সামরিক জান্তার সঙ্গে সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে চলতি সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ।
রবিবার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান। মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দে সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, মিয়ানমারের জান্তার ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী একযোগে বিমান, জাহাজ এবং স্থল অভিযান চালানোর পর ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে রোহিঙ্গাদের পেছনে অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের তারা মূলত ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে।
এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী স্থল অভিযানে আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে সংঘর্ষের মাঝখানে কয়েকজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের অ্যাম্বুলেন্সে হতাহতদের সরিয়ে নিয়েছে। এমন দৃশ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নিহতরা মিয়ানমারে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গা সদস্য। তবে এসব তথ্যের কোনো কিছুই জান্তা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নয়। যুদ্ধের কোনো তথ্য দেয় না জান্তা। জান্তাবিরোধীরা ইরাবতিসহ বিভিন্ন অনলাইন পরিচালনা করে কিছু তথ্য দিয়ে থাকে।
এদিকে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এতে অপরাপর ইস্যুর পাশাপাশি রাখাইন সংকট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে চীন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চীন মধ্যস্থতার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
তবে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি লুইস গুয়েন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এখন উপযুক্ত সময় নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গুয়েন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। তবে এখন তাদের ফেরত পাঠানোর উপযুক্ত সময় নয়।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশ অংশে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড উলুবনিয়া এলাকায় স্থানীয় নুরুল ইসলামের বসতঘরে এসে পড়ে এলএমজির গুলি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে সীমান্ত এলাকার মানুষের। অনেকে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলমান থাকায় মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার আছে এবং এখন সীমান্তের কাছাকাছি সংঘর্ষ চলছে বলে তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
